Availability: In Stock

Rohu Chandaler Har Ebong

Author: Abhijit Sen

Original price was: ₹ 295.00.Current price is: ₹ 236.00.

Categories: ,

Description

Rohu Chandaler Har Ebong : Abhijit Sen

Publisher : Suprokash

রহু চণ্ডালের হাড় এবং : অভিজিৎ সেন

সারাংশ :

‘খাটিয়ায় শুয়ে তাঁবুর পর্দা সরিয়ে একফালি চাঁদ দেখে হানিফ। নিঃসঙ্গ মানুষ প্রকৃতি থেকেও যে সুখ পায়, এমন নয়। সারাদিন যে মানুষ কাজের ভিড়ে অন্য অনেকের মাঝখানে থাকে, রাত হলে তার নিজের কথা মনে পড়ে। তখন সে পর্দা সরিয়ে চাঁদ দেখে, চাঁদ না থাকলে অন্ধকার আকাশের তারা আর ছায়াপথ দেখে হয়তো আরো একাকী হয়ে যায়।

তখন তার দাঙ্গার কথা মনে হয়, মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর কথা মনে হয়, মনে হয় বোনের নিখোঁজ হওয়ার কথা। তখন চাঁদ থেকে হিম ঝরে, তারা থেকে বরফের কণা যেন ছিটকে এসে তার গায়ে লাগে। আলো কিংবা অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ যদি কোনও পেঁচা কাঁপিয়ে পড়ে মাঠের আলে, কর্কশ চিৎকার করে, তখন তার চমক ভাঙতে পারে।

কিন্তু চাঁদ তাকে আবিষ্ট রাখে। সে আয়নার খাঁড়িতে দেখা জলপরির কথা ভাবে। ভাবতে ভাবতে অদ্ভুত সব পরিকল্পনা করতে থাকে সে, যা তার আয়ত্তের এবং সামর্থ্যের বাইরে। পলবির কথা ভাবতে তার ভালো লাগে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার বিষণ্ণ মুখ, তার চিবুকের উপরের উল্কি। একসময় নিজের অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পড়ে তারপর।

ঘুম ভেঙে গেলে অন্ধকারে নিজেকে মনে হয় ছায়ার শরীর। এতক্ষণ অন্য কোনো জগতেই সে ছিল। আদিনার মিনা করা সুসজ্জিত মসজিদ, তার পিছনে উঁচু এবং চওড়া মাটির জাঙ্গাল। মসজিদের উপর চাঁদ। কোনো মানে হয়। ঠিক যেন ক্যালেন্ডারের ছবি।

সেই জাঙ্গাল, যার অবস্থিতি এখন প্রশস্ত ধানখেত, আর মাঝে মাঝে অকারণ মাটির টিলা, সেই জাঙ্গালই তো! একজন ঘোড়সওয়ার, সে হানিফ নয় কিছুতেই অথচ হানিফ ছাড়া আর কে-ই বা? পাশে যে ইরানি বেদেনি—হলুদ রুমালে বাঁধা চুল, সে তো পলবি নয়। কী আশ্চর্য, স্বপ্ন এমনই বিস্ময়! পলবিই বটে! আদিনার ধ্বংসস্তূপ কোন্ মায়াবলে হয়ে যায় সুসজ্জিত মিনার। দুই ঘোড়া পাশাপাশি হাঁটে, দুই সওয়ারে প্রাণবন্ত প্রেমের সংলাপ বলে।

তারপর উলটোদিক থেকে ঘড় ঘড় শব্দ আসে। অশ্বারূঢ় হানিফ দেখে জাঙ্গালের উপর দিয়ে রোড রোলার আসছে। থাকি শার্ট, খাকি প্যান্ট পরা ড্রাইভার তো হানিফই বটে। মাডগার্ডের উপর আড় হয়ে বসে কে ও? পলবি। নীলের উপরে সাদা ডুরে পালপাড়ার তাঁতের শাড়ি পরে গেরস্থ মেয়েটি।’

———-

“রাজমহল, বারহেট, তিনপাহাড়, সাহেবগঞ্জের হাটেবাজারে পীতেমের দল রঙিন কামিজ আর ঘাঘরা উড়িয়ে নতুন বিহ্বলতা আনে। মোষের শিঙে বাঁধা দড়ি দুপাশে বাঁশ দিয়ে ঠেলে টনটনা করা হয়। তার উপরে লম্বা বাঁশ হাতে যে রমণী চলে ফিরে আগুপিছু করে তার শরীর বড়ো টান টান, তার চোখমুখে আগুনে মসৃণতা, তার গায়ের চামড়া পাকা গমের রঙের। নিচের যে মানুষটা ঢোলক বাজায় তার মাথায় রঙিন ফেট্টি। আর একজন উপরআলির চলার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে বিচিত্র গান গায়, যে ভাষা কেউ বোঝে না, কিন্তু সুরের মাদকতা এড়াতে পারে না।

মাধোয়া ধাইর্ যারে

মাধোয়া ধাইর্ যারে

ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা

তিলেক্ পঢ়োরে তিলেক্ পঢ়োরে

ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা

হেরছি ফক্ড়িরে হেরছি ফক্ড়িরে

ছোটি ছোটানি হেরছি ফক্ড়ি।

নতুন নতুন বসতি সব, নতুন নতুন মানুষ, উঠতি বড়োলোক, জাঁকজমক, ঠাট, সবই নতুন। বাজিকর ভাবে, হ্যাঁ, এমন জায়গাই বাজিকরের উপযুক্ত বটে। সাহেব, পুলিশ, মুন্সি, মহাজন, শুঁড়ি, কয়াল, দোকানদার, মোদক, দালাল সব মিলে একটা ব্যাপক লুঠের বন্দোবস্ত। প্রথমে বোঝা যায় না কে লুঠ করে আর কে লুঠ হয়। এ ভারি মজার ব্যাপার। যে লুঠ করে তার উল্লাস বোঝা যায়। কিন্তু যে মানুষটা লুঠ হচ্ছে সে কেমন করে দিনের শেষে শুঁড়ির দোকানে হুল্লোড় করে? মোরগা-লড়াইয়ে বাজি রাখে হাটে আনা শেষ সম্বল?

পীতেম বলে, বাজিকরের বেটারা, চোখ কান খোলা রেখে চলো। দেখেবুঝে চলো। পয়সা তোমাদের হাতে আসবে। দুঃখ তোমাদের ঘুচবে।

হাটের মাঝখানে বাজিকর খেলোয়াড়ের খেলার আসর যখন জমে ওঠে তখন পীতেম তার কিছু লোককে ছড়িয়ে দেয় হাটের মধ্যে। তারা নানারকম মনোহারি জিনিস বিক্রি করে অবিশ্বাস্য বিনিময়-মাধ্যমে। একটা রঙিন পুঁতির মালার বদলে একঝুড়ি চাল পাওয়া যায়, একখানা গালার চিরুনিতে পাওয়া যায় পাঁচ সের সরষে, নেশার জিনিসের বদলে সর্বস্ব দিতেও মানুষ রাজি থাকে।

এসব দেয় কারা? এসব দেয় যারা দূর দূর গ্রাম থেকে গরুর গাড়িতে অথবা পিঠের বাঁকে শসা নিয়ে আসে। যাদের কাঁখে গোঁজা একটি বাঁশি অবশ্যই হাত খালি হওয়ার অপেক্ষায় থাকে, যখন সে সমস্ত গ্লানি এবং শ্রমকে ভুলে সেই বাঁশিতে ফুঁ দেয়।”

———

চারিদিকে হাটুরে মানুষের ভিড় গোল হয়ে। মাঝখানে ছটি সাপের ঝাঁপি। একটির মুখ খোলা। তার ভেতর থেকে মাথা তুলে আছে এক বিশালকায় গোক্ষুর, স্থানীয় ভাষার গোমা। রূপা ঢোলকে কাঠি মারে, ঘুরে ঘুরে ভিড়ের বৃত্তকে বড়ো করে। শরমীর কাপড় হাঁটুর উপরে তোলা। পায়ের চেটোয় ভর দিয়ে বাঁ উরু আন্দোলিত করে গোক্ষুরের সামনে। যুবতী নারীর ভরাট উরু। মানুষের ভিড় বাড়ে। গোমা তার উত্তোলিত দেহ বাঁকা করে পিছন দিকে, আরো পিছনে। শরমী হাতের মুদ্রা করে। গোমা ছোবল মারে, শরমী হাঁটু সরিয়ে নেয় এবং একই সাথে বাঁ হাতে সাপের গলার নিচে হাত দিয়ে সাপকে প্রতিহত করে। একটা পূর্ণবয়স্ক গোক্ষুরের ছোবলের শক্তি মাঝারি শক্তির ঘুষির মতো। শক্ত মাটিতে ছোবল আছড়ে পড়লে সাপ জখম হবে। শরমী বলে, খা-খা-খা, বক্কিলাক্ খা, কিপ্লুনাক খা-।

রূপা ঢোলক রাখে। মাথার রঙিন ফেট্টি খুলে আবার নতুন করে বাঁধে। রক্তাভ বিশাল তার চোখ, পাকা গমের মতো গায়ের রঙ, বলিষ্ঠ চেহারা। অচিন মানুষকেও সে আকৃষ্ট করতে পারে। ঝুলির ভেতর থেকে একটা শুকনো শিকড় সে বের করে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ঢঙে সে বলে, এই যে ভদ্দরলোক-ইয়ার নাম মণিরাজ গাছ। তারপর অদ্ভুত ভঙ্গিতে স্বরগ্রাম উঁচুতে নিচুতে উঠিয়ে নামিয়ে সে অনর্গল কথা বলে। যে-কোনও শব্দের সঙ্গে যখন তখন একটা বিসর্গ যুক্ত করে সে তার পেশাদারি ঢঙটি বজায় রাখে।

ইয়ার নাম মণিরাজ গাছ।

আস্তক মুনি কামনা মণিরাজ সাপের মাথায় মণি।

মহাভারতের ফরমাঃ ন।

হামার ওস্তাদ আপার আসামে থাকেন-

কামরূপের লোক উনিহ্ ।

জাতে গারো লোক–

না (হা)ম-রামলাল গারোলী।

বয়স-একশ পঁচিশ বছ্ছর।

তবি এটাই কথা মোনৎ রাইখবেন,

ভদ্দর নোক-

দুইটা, চাইরটা পয়সা সাপ দেখায়া হামি

রোজগার করবা চাই নাঃ ।

হামার একটাই দাবি, ভন্দর নো(হ)ক,

ওস্তাদের হুকুম-

বছরে দুই মাস হামি বিনা পয়সায়

সাপ দেখায়া বেড়াই।

মাত্তুর দুই মাস।

আর এই মণিরাজ—

*         *             *

তারপর শরমী ঝাঁপির ঢাকনায় তাবিজ ফেরি করে, ফাউ হিসাবে ক্রেতার সঙ্গে দুই একটা রঙ্গরসের কথা বলে। এদিকটায় ব্যাপারটা খুবই অভিনব। মানুষ দেখে মুখের কাছে তাবিজ ধরলে, গাছড়া ধরলে অমন কালান্তক গোমা, আলাদ্ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আর সাপকে ডরায় না কে? মানুষ বারো আনা পয়সা খরচ করতে পিছপা হয় না। রূপার রোজগার ভালোই হয়। তিন বছরের পলাতক জীবনে সে সঞ্চয় করেছে এই নতুন পেশা, খেলা ও তার সঙ্গে এই পাটোয়ারি বুদ্ধির ব্যবসা। চেহারা তার চিরকালই আকর্ষণীয়। এখন সেই চেহারাও তার কাজে লাগে। বাজিকর সাপ নাচায় না, জামির একথা বলেছিলো কোন এক প্রাচীন কালে। তারপর জামির একথাও বলেছিলো, থিতু হওয়ার জন্য সব কাম করবা হোবে। রামলাল গারোলী তার গুরু ঠিকই। শুধু সাপ ধরা আর সাপ খেলাই শেখেনি রূপা তার কাছ থেকে, শিখেছে আরো অনেক কিছু। সাপ ধরো, রামলাল শেখাত, লোহার শিক গরম কর্যা ধরো তার মুখোৎ, সাপ তার স্বভাব দোষে খুবলাবে সি গরম শিক। একবার, দুবার, পাঁচবার। তা বাদে? তা-বাদে তার মুখোৎ খ্যাংড়ার কাটি ধরো, মুখ ঘুরায়ে লিবে সি। ইবার তুমি সি ছাইপাশ দি তাবিজ বানাও, মাদুলি বানাও, মানষি কেনবে।

Additional information

Weight 0.4 kg
Book Author

Language

Bengali

Publication

Suprokash

Book Format

Hardcover

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “Rohu Chandaler Har Ebong”

Your email address will not be published. Required fields are marked *